খড়গপুর ২৪×৭ ডিজিটাল: সংসারের হাল ধরতে ‘দিদির অনুপ্রেরণাই’ ভরসা। বাড়িতে দেওর কিডনির রুগী। শাশুড়ি কিডনি দিয়েছেন অসুস্থ ছেলেকে। স্বামী অটোরিক্সা চালাক। করোনা পরিস্থিতিতে সেভাবে যাত্রী নেই অটোরিক্সাতেও। তারপর অসুস্থ মা-ভাইয়ের কথা ভেবে অটো নিয়ে বেরোচ্ছেন না বাইরে। ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
বেহাল সংসারের হাল ধরতে ‘দিদির অনুপ্রেরণাতে চপ দোকান করেছেন অনামিকা চক্রবর্তী নামে এক গৃহবধূ। দোকানের নাম “আড্ডা”। ব্যানারে লেখা, ‘দিদির অনুপ্রেরণায়’ সঙ্গে চপ, পিঁয়াজি, চা, বেগুনি, ঘুগনি, রুটি আর মোমো। মাস দেড়েক আগে শুরু করা ব্যবসাতেই হাসি ফুটেছে মেদিনীপুরের চক্রবর্তী পরিবারে।
অনামিকাকে ব্যবসায় সর্বত ভাবে সহযোগিতা করেন অনামিকার স্বামী প্রণবেশ। অনামিকা ও প্রণবেশের কথায়, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বলেছিলেন, ‘তেলেভাজার দোকান করেও জীবনে অনেক উন্নতি করা যায়! আমি আমি জানি অনেকে তেলেভাজা বিক্রি করেই পাঁচতলা, দশতলা বাড়ি করেছেন৷’ দিদির কথা শুনেই এমন ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
অনামিকা বলেন, ‘বাড়িতে দু-জন অসুস্থ মানুষ আছে। তাঁদের কথা ভেবে আমার স্বামী এখন অটো নিয়ে বাইরে যাচ্ছে না। ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সংসারতো চালাতে হবে। আমরাতো অসৎ কোনও পথে রোজগার করছিনা।
দিদি যখন বলেছেন অনেক ভেবে চিন্তেই বলেছেন। তাই ভাবলাম বাড়ির সঙ্গে দোকান করার মতো একটু জায়গা যখন আছে, দোকান করেই দেখা যাক। এই ভেবেই দোকান শুরু করেছি। বিক্রিবাটাও ভালোই হচ্ছে।’
তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে কটাক্ষ করে বিরোধীরা যতোই নিন্দা করুক, কিছু মানুষ ভরসা করছেন দিদির কথায়। তাঁরা সাফল্যও পাচ্ছেন। বিজেপি ও সিপিএম নেতৃত্ব বলছেন, রাজ্যে চাকরিবাকরি নেই। এসব চটকদারি কথা বলেই দৃষ্টি ঘোরাতে হবে। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার রাজ্যে। কোনও ব্যবসাই খারাপ নয়।
সবাই চাকরিও পাবেনা। যাদের যোগ্যতা আছে তাঁরাতো পাক।’
মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেলবাজারে তরুণ সংঘ ব্যাপাগার সংলগ্ন এই চপ দোকানের নাম ‘আড্ড’। সকাল থেকে ডাক্তারখানায় আসা লোকজন, স্থানীয় মানুষ, শ্রমিকের ভিড় থাকে ওই এলাকায়। সকাল-বিকেল দোকানে ভিড়ও হচ্ছে মোটামুটি।
অনামিকার স্বামী প্রণবেশ বলেন, দেড় মাস দোকান করেছি। মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমরা তেলেভাজা আগে থেকে ভেজে ফেলেরাখিনা। সবাইকে গরম গরম ভেজে দেওয়ার চেষ্টা করি। একটু সময় লাগলেও লোকজন একটু অপেক্ষা করেই কিনছেন।’
স্থানীয়রাও জানাচ্ছেন, যে কারনেই হোক দোকানে খদ্দের হচ্ছে দেখছি। স্থানীয় এক বাসিন্দা বাপী সাহা বলেন, ‘দোকানের নাম ‘আড্ডা’। দোকানের ব্যানারে লেখা আছে ‘দিদির অনুপ্রেরণায়।’
তেলেভাজার দোকানের এই ধরনের লেখা কিছুলোক মসকরাও করছেন৷ কেউ কেউ এসে বলছেন দিদির অনুপ্রেরণায় দুটো চপ দাও। আবার কেউ বলছেন, দিদির তেলেভাজা দাও! সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই দোকানের পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে।’