খড়গপুর ২৪×৭ ডিজিটাল: ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে কিনারা করে ফেলল খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। খড়গপুরের তৃণমূল কর্মী ভেঙ্কট ওরফে প্রসাদ রাওয়ের খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
ধৃতদের মধ্যে আবার দুইজন রেলকর্মী রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা হলো শুভম সোনার ওরফে বিক্রম (২৯), এন ঈশ্বর রাও (৩৭) ও জে কৃষ্ণা রাও (৪৮)। প্রথমজনের বাড়ি খড়গপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাড়খন্ড বস্তি এলাকায়। আর বাকি দুজনের বাড়ি রেলনগরী খড়গপুর শহরের মথুরাকাটি ও ডাউন মথুরাকাটি এলাকায়।
এদের তিনজনকেই বৃহস্পতিবার রাতে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। শুভমকে নিমপুরা এলাকা থেকে। বাকি দুজনকে মথুরাকাটি এলাকায় বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে। জানা গিয়েছে প্রসাদ খুনের পর যে কজনকে আটক করা হয়েছিল তাদের কারোর কাছ থেকে এই তিনজনের নাম পাওয়া যায় নি। পুলিশ অন্য একটি সূত্র থেকে এই তিনজনের নাম পেয়েছে।
খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত রয়েছে শুভম। সেই গুলি চালিয়েছিল। আর বাকি দুজন গোটা ঘটনার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। এদিকে তিনজনকেই শুক্রবার খড়গপুর এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়েছে। ধৃত তিনজনের মধ্যে শেষের দুজন রেলকর্মী। তারমধ্যে ঈশ্বর রাওয়ের বিরুদ্ধে সমাজবিরোধী মূলক কাজের জন্য একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এমনকি মাস চারেক আগে অস্ত্র সহ ধরা পড়েছিলেন তিনি। এছাড়া ধৃত শুভম ২০২১ সালে খড়গপুর শহরের খরিদা গুরুদ্বোয়ারা এলাকার ব্যবসায়ী ভোলু সোনকার খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস পর এই শার্প শ্যূটার যুবক গ্রেফতার হয়েছিল। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। খড়গপুর শহরের খড়িদা বড়বাতির কাছে ডিআইজি কার্যালয় ও বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত ঝাড়খন্ড বস্তি এলাকার বাসিন্দা এই যুবক প্রসাদকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সহ আরও কয়েকজন ধরা পড়ে নি। বিশেষ করে সোমবার রাতে খড়গপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মাতা মন্দিরের সামনে ফাঁকা মাঠে গুলি চালিয়ে প্রসাদকে খুন করার ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বাকি দুজন এখনও অধরা রয়েছে। এই ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন ” খড়গপুরে খুনের ঘটনায় তিনজন গ্ৰেফতার হয়েছে। তারসাথে ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে একদিকে পুরনো শত্রুতা। অপরদিকে সম্প্রতি জমি সংক্রান্ত বিরোধ। এই দুইয়ের জেরে খুনের ঘটনা ঘটেছে। জানা গিয়েছে একসময়ে খড়গপুরের মাফিয়া ডন শ্রীণুর সঙ্গে শুভম ও ঈশ্বর ছিল। পরে প্রসাদ শ্রীণুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। তারপর থেকেই এই দুজন শ্রীণুর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়। সেই থেকে একটি রাগ তো ছিলই।
তারসাথে সম্প্রতি খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার মীরপুর এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ যুক্ত হয়। কোটি টাকার উপর মূল্যের সেই জমির মালিক হতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী প্রসাদ। যেটা কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন না দুই রেলকর্মী ঈশ্বর ও কৃষ্ণা। কিন্তু প্রসাদকে কিছু করাও যাচ্ছিল না। কারন রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তিনি জমিটির মালিক হওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
সেই কারনে প্রসাদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে শুভম সহ পলাতক দুই দুষ্কৃতীকে কাজে লাগানো হয়। তবে পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও অনেক কিছু জানার রয়েছে।