খড়গপুর ২৪×৭ ডিজিটাল: রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিবাদের জেরে খড়গপুর শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই দুটি সংস্থার বিবাদে চরম সমস্যায় পড়েছেন রেলকর্মী থেকে শুরু করে রেলের পেনশনভোগী সহ সাধারন মানুষ। অভিযোগ উঠেছে ব্যাঙ্কের জলের লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার।
ঘটনাটি ঘটেছে রেলের খড়গপুর ডিভিশনের সদর দফতর ডিআরএম কার্যালয় লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। জানা গিয়েছে গত ২৫ মে রেল এই ব্যাঙ্ক ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তারসাথে অভিযোগ রয়েছে ভাড়া বাকির। আর এই দুই কারনে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ভবন খালি করে দেওয়ার জন্য বলেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ভবন খালি না করায় রেল কর্তৃপক্ষ জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তারসাথে ব্যাঙ্কে প্রবেশের পথ কেটে দিয়ে পিলার দিয়ে ঘিরে দিয়েছে।
আর রেলের এই আচরণকে অমানবিক বলে উল্লেখ করে প্রতিবাদে সরব হয়েছে আমরা বামপন্থী- খড়গপুর। তাঁরা দাবি করেছেন অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা না করে এইভাবে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। অবিলম্বে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ ফের করে দিতে হবে। যদিও জানা গিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ ডিআরএম কার্যালয়ের পেছনে পে অফিসার কাছে একটি ভবনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্তু সেই ভবন ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার উপযোগী নয় বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে।
এখন এই জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ব্যাঙ্কে কাজ চলছে। তবে এইভাবে কাজ চালানোর ক্ষেত্রে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জানা গিয়েছে এই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে রেলের ভাড়া বাবদ ২০ লক্ষাধিক টাকা পাওনা রয়েছে। তারমধ্যে ব্যাঙ্ক ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পাওনা মিটিয়েছে। এই ব্যাপারে ব্যাঙ্কের ডিআরএম শাখার ম্যানেজার সন্তোষ কুমার বললেন ” রেল অন্যায়ভাবে এই ভাড়া বাড়িয়েছে। ব্যাঙ্কের ভবন ছাড়াও সামনের ফাঁকা জায়গার ভাড়াও জুড়ে দিয়েছে। আর এইভাবে হঠাৎ করে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এছাড়া রেল কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে যে ভবনটি ঠিক করেছে সেটি ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার উপযোগী নয়। কোনও নিরাপত্তা নেই। পরিবেশ উপযুক্ত নয়। তাছাড়া ভবনটি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আর এই ভবন সংস্কার করার দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সেসব কিছু না করেই আমাদের উঠে যেতে বলা হয়েছে।” তিনি জানালেন বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্কের শীর্ষ মহলের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের আলোচনা শুরু হয়েছে।
অপরদিকে রেলের খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএম তথা জনসংযোগ আধিকারিক রাজেশ কুমার বললেন ” রেল যা করেছে নিয়ম অনুযায়ী করেছে। কোনও অন্যায় কারোর সাথে করা হয়নি। একটি ভবন বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলে নিয়ম অনুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া রেল এই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা এখনও পাবে।”
এদিকে আমরা বামপন্থী-খড়গপুরের সম্পাদক অনিল দাস বলেছেন ” এইভাবে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা অমানবিক। রেল এটা ঠিক করেনি। আমরা দাবি করেছি অবিলম্বে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হোক। তারসাথে দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুক।” এদিকে ব্যাঙ্কে প্রবেশের পথ কেটে দিয়ে পিলার বসিয়ে দেওয়ায় গ্ৰাহকদের ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।